সেঞ্চুরির আফসোস না করলেও পারেন লিটন

সেঞ্চুরির আফসোস না করলেও পারেন লিটন

মুগ্ধতা তার ব্যাটে আগেও ছিল, স্বপ্নেরা আঁকিবুঁকি খেলতো তার শটে। এমন একজন ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের! পড়া হতো এমন বিস্ময়েও। কিন্তু সেটা যে দীর্ঘস্থায়ী হতো না, এটাই ছিল সমস্যা। লিটন দাস যদি এই সমস্যা জিইয়েই রাখবেন, তাহলে আর তিনি ‘ক্লাসিক দাস’ হবেন কী করে!

এখন তিনি ক্রিজে আসেন, সাবধানী শুরু করেন। এরপরই তার ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসে শিল্পের আঁচড়। ইনিংস উদ্বোধনে এসে মুজিব উর রহমানকে পুল করে শুরু করেন, এরপর কখনো রশিদ খানের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলকে প্রাপ্য বুঝিয়ে দেন।

কখনো আবার কাভার ড্রাইভ করে ব্যাটটা ধরে রাখেন এমনভাবে, যেন ফটোগ্রাফারের ঠিকঠাক ক্লিকটা করতে কোনো সমস্যা না হয়। তার কাট শট? স্পিনের বিপক্ষে করা তার লেট কাটটা বোধ হয় সে-ই প্রেমিকের জন্য, একটু আগেই প্রেমিকার সঙ্গে ঝগড়া করে এসে মনটা যার বিষণ্ন। এমন কোনো সৌন্দর্য যে তার বড্ড দরকার ছিল!

এত কিছুর পর সেঞ্চুরির আফসোসটা এমনিতেও বাড়াবাড়িই বোধ হয়। আজ যেটা পাননি লিটন। তবে ক্রিকেট তো আর কেবল সৌন্দর্যের খেলা না, রানও দরকার; এমন বাক্যবাণে বিদ্ধ করতে পারেন সমালোচকরা। তবে তাদের জবাব দিতে বলা যায়, লিটন কি রানও করছেন না!

প্রথম ম্যাচে এমন এক বলে আউট হয়েছিলেন, করার ছিল সামান্যই। পরের দুই ম্যাচেই বুঝিয়ে দিলেন, ফর্মটা এখনও হারাননি। প্রথম দিন দলকে জিতিয়েছে তার সেঞ্চুরি আর মুশফিকের সঙ্গে জুটি। আজ কী হবে সেটা বলার সময় অবশ্য এখনও আসেনি।

তবে লিটন যে নিজের কাজটা ঠিকঠাকের চেয়েও বেশি করে করেছেন, এ নিয়ে দ্বিধায় পড়লে যে কারো ক্রিকেট জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন উঠে যেতে পারে! সেঞ্চুরি পেলে আরেকটু ভালো হতো, সেটা ঠিক। কিন্তু ক্রিকেটের সৌন্দর্য তো এমন অনিশ্চয়তাতেও।

আজকের ম্যাচের প্রেক্ষাপটটা বলি আরেকবার। অধিনায়ক তামিম ইকবালের রোগটা স্পষ্ট হয়ে গেছে পুরোপুরি। ফজলহক ফারুকীর ইনসুইং বুঝতে পারছেন না তিনি। আগের দু ম্যাচে এলবডব্লিউ হয়েছিলেন, এ ম্যাচে বোল্ড। পার্থক্য বলতে এটুকুই। কিন্তু আউটের ধরন প্রায় একই।

এরপর সাকিব এসেছেন, কিছুক্ষণ ক্রিজে থেকেওছেন। কিন্তু দলকে নিশ্চয়তা দেওয়ার আগেই তিনি সাজঘরে ফেরত গেছেন। লিটন যদি তখন চলে যেতেন? ইনিংসের চিত্রটা নিশ্চয়ই ভিন্ন হতো। এরপর আরও দুজন ব্যাটসম্যানও তো সাজঘরে ফিরেছেন, কিন্তু লিটন থেকেছেন নিশ্চয়তা হয়ে।

অবশ্য আউট হয়েছেন যেভাবে, অপ্রত্যাশিতই ছিল। মাটিতে গড়িয়ে এতদিন সফল হচ্ছিলেন। গত ম্যাচেও সেঞ্চুরির আগে পর্যন্ত মাটিতেই খেলছিলেন, সফলও হয়েছেন। সেঞ্চুরির পর ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন বেশ কয়েকটা। এই ম্যাচে কেন তাড়াহুড়ো করলেন, সেটা লিটনই ভালো বলতে পারবেন। তাও ৭ চারে ১১৩ বলে ৮৬ রানের ইনিংসকে তো ফেলেও দেওয়া যায় না।

তার শটের ‍মুগ্ধতা, ইনিংস গড়ে তোলার অনন্যতায় ডুবে থেকে এই আউটটাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখাই বোধ হয় উত্তম। আফসোস? না করাই ভালো। প্রশংসা? লিটনের ইনিংস বর্ণনার জন্য একটা বাক্য তো ইয়ান বিশপ বলেই দিয়েছেন সেই কবে, ‘লিটন দাস ইজ পেইন্টিং মোনালিসা, হিয়ার ইন…’ ডটের স্থানে কেবল স্টেডিয়ামের নাম বদলে দিলেই হয়। কখনো ক্রাইস্টচার্চ, কখনো চট্টগ্রাম, কখনো বা অন্য কোথাও; ইনিংস বর্ণনার পার্থক্য তো এটুকুই!

 

আপনি আরও পড়তে পারেন